পল্লীবিদ্যুতের ২০ হাজার মিটার রিডার চরম অন্দোলনে যাচ্ছে

লিখেছেন লিখেছেন এফ শাহজাহান ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৩, ০১:১৫:৫১ দুপুর



সারাদেশে পল্লীবিদ্যু সমিতির প্রায় ২০ হাজার ম্যাসেঞ্জার ও মিটার রিডার এবার কর্তৃপরে চরম জুলুম অন্যায়ের প্রতিবাদে কঠোর আন্দোলনে নামার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। ৩২ বছর ধরে চলে আসা অস্থায়ী চুক্তিভিত্তিক নিয়োগকে স্থায়ী করা এবং ট্রেডইউনয়নের দাবিতে এই আন্দোলনে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। এজন্য সারাদেশের প্রতিনিধিদের নিয়ে কয়েক দফা গোপন বৈঠকে আন্দোলনের গতি প্রকৃতি নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। এখন শুধু সারাদেশে একযোগে কর্মসুচী ঘোষনার অপেক্ষা।

পল্লীবিদ্যুতে কোন আন্দোলন তো দুরের কথা, কোন কর্মীর বিরুদ্ধে এসংক্রান্ত সন্দেহ করলেই তার চাকুরী হারাতে হয়। সেজন্য এবার হয় দাবি আদায় আর না হয় চাকুরী হারালে সবাই একসাথে চাকুরী ছেড়ে আইনের আশ্রয় নেবার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন । তারা আশা করছেন মেয়াদের শেষ প্রান্তে এসে তাদের ন্যায্য দাবির প্রতি সরকার সুদৃষ্টি দিবে এবং তাদের দাবি চাকুরী স্থায়ী করন ও ট্রেডইউনিয়ন করার অধিকার ফিরে পাবেন।

সারাদেশে পল্লীবিদ্যুতের ৭০টি সদর দপ্তর এবং প্রায় ৪০০টি অফিসে ২০ হাজার ম্যাসেঞ্জার ও মিটার রিডার কর্মরত আছেন। তাদেরকে স্ট্যাম্পে মুচলেকা লিখে দিয়ে কর্মেেত্র ঢুকতে হয় এবং কর্তৃপরে কেনা দাস হয়ে নিরবে সব অন্যাায় অত্যাচার সহ্য করতে হয়। কেউ তাতে আপত্তি করলেই তার চাকুরী চলে যায়। চাকুরী কেন যাচ্ছে তা জানার অধিকারও নেই তাদের। এজন্য তারা সবাই কর্তৃপরে এই জুলুম নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে অবশেষে এখন সুপ্রিমকোর্টের আশ্রয় নেয়া ছাড়া আর কোন পথ দেখছেন না। এজন্য তারা দেশের মানবাধিকার সংস্থা গুলোরও সাহায্য চেয়েছেন।

কথায় কথায় চাকুরী চ্যুতি,নানা ছলছুতায় বেতনকর্তনসহ নানা অমানবিক নির্যাতনের শিকার এই কর্মীরা মনে করছেন কর্তৃপ তাদের মানবাধিকার লঙ্ঘন করছেন। এর প্রতিকারের জন্য আদালত এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলো তাদের পাশে দাঁড়াবে বলে তারা আশা করছেন।

এবিষয়ে বগুড়া পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির জিএম জাহাঙ্গীর আলম জানান,মিটার রিডার কিংবা ম্যাসেঞ্জারদের আন্দোলনের কোন সুযোগ নেই। তারা সবাই চুক্তিভিত্তিক আস্থায়ী নিয়োগপ্রাপ্ত।তাদেরকে পল্লীবিদ্যুতায়ন বোর্ডের নির্ধারিত নীতিমালার আলোকে কাজ করতে হয়। তাদের নিয়োগ, ছাঁটাই বেতনভাতাসহ সবকিছুই ওই নীতিমালা অনুযায়ী হয়ে থাকে। সেজন্য আমাদের কিছু করার নেই। তবে কারো সম্পর্কে বিশৃংখলা সৃষ্ঠির কোন অভিযোগ পাওয়া গেলে সংস্থার নীতিমালা অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

১৯৮১ সালে যাত্রা শুরু করা পল্লীবিদ্যুত সমিতির জনবল এবং ব্যাপক অবকাঠামো এবং আর্থিক সামর্থ নিয়ে ধারাবাহিক সাফল্য অব্যাহত থাকলেও মিটার রিডার ও ম্যাসেঞ্জারদের বিষয়ে চরম অবহেলা প্রদর্শন করে আসছে । দীর্ঘ ৩২ বছর ধরে অস্থায়ী চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত এসব মিটার রিডার ও ম্যাসেঞ্জাররা পল্লীবিদ্যুতের কর্মকর্তাদের চরম জুলুম নির্যাতনের শিকার হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। এখন তারা এসবের বিরুদ্ধে ঘুরে দঁড়ানোর এবং সকল অন্যায়ের প্রতিবাদ জানানোর জন্য শেষ চেষ্টা হিসেবে আন্দোলনে নামছেন।এর আগে এসব অন্যায়ের বিরুদ্ধে যরাই কথা বলেছেন তারাই চাকুরী হারিয়েছেন। এজন্য এবার তারা সবাই একযোগে আন্দোলনে নেমে এর একটা বিহিত করতে চাচ্ছেন।

মিটার রিডার এবং ম্যাসেঞ্জারদের প্রতিনিধিরা জানান,চাকুরীতে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের সময় কর্তৃপ কোথাও ১৫০ টাকার এবং কোথাও ৩শ টাকার ননজুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে মুচলেকা লিখে নেন। সেখানে কর্মীরা অঙ্গীকার করতে বাধ্য হোন যে তাদেরকে যেকোন কারনে চাকুরীচ্যুত করা হলে এজন্য তারা কোন প্রতিবাদ,প্রতিকার বা আবদার করবেন না। স্ট্যাম্পে এভাবে স্বার করে তাদের মূলত দাসের মত ব্যবহার করা হয়। তাদেরকে এভাবে দাস যুগের মত শৃংখলে আবদ্ধ করে পল্লীবিদ্যুৎ কর্তৃপ জুলুম নির্যাতন চালাচ্ছে বলে তারা ুব্ধ হয়ে উঠেছেন।

পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির সব স্তরের কর্মকর্তা কর্মচারীদের চাকুরী নিয়মিত এবং স্থায়ী হলেও মিটার রিডার এবং ম্যাসেঞ্জাররা আজ পর্যন্ত চুক্তিভিত্তিক নিয়োগেই কাজ করছেন। এজন্য তারা সব সময় নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন। এনিয়ে প্রায় ৩০ বছর ধরে উর্ধতন কর্মকর্তাদের কাছে ধর্না দিয়েও তারা কোন সাড়া পাননি। আর চাকুরী স্থায়ী না হওয়ায় তারা ঠিকা মজুরের মত সব সময় কর্ম হারানোর ভয়ে আতংকিত হয়ে থাকেন। এছাড়াও স্থায়ী না হওয়ায় তারা শুধুমাত্র মজুরী ছাড়া আর কোন সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেন না। অথচ তারাই এই সংস্থার একমাত্র কর্মী যারা সরাসরি মাঠপর্যায়ে গ্রাহকদের সেবার সঙ্গে জড়িত। এরাই পল্লীদি্যুতের রক্তসঞ্চালন করে অর্থাৎ আর্থিক জনশক্তি হিসেবে কাজ করেন।

এসব অন্যায় অবিচারের প্রতিকারের দাবিতে ২০০৮ সালে তারা একদিনের কর্মবিরতি ঘোষনা করেিেছলেন। সেই অপরাধে একদিনে ৭০ জন নেতৃস্থানীয়সহ কয়েকশ মিটার রিডারকে চাকুরীচ্যুৎ করা হয়েছিল। এর পর থেকেই মিটার রিডাররা সকল অন্যায় অবিচার নিরবে হজম করে যাচ্ছেন। তারপরও কর্মকর্তারা যাকেই যখন সন্দেহ করেছেন তাকেই তাড়াচ্ছেন। যে কেউ মিটার রিডারদের প নিয়ে তাদের সংগঠিত করার চেষ্টা করছে এমন আভাস পেলেই তাকে সঙ্গে সঙ্গে চাকুরীচ্যুৎ করা হচ্ছে। আর কেউ একবার পল্লী বিদ্যুতের এই চাকুরী হারালে সে আর কখনো কোথাও পল্লীবিদ্যুতের এই পদে কাজ নিতে পারেন না।

নাম প্রকাশ পেলেই চাকুরী হারাতে হবে একারনে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন মিটার রিডারর জানান, পদে পদে কর্মকর্তাদের আচরনে চরম হয়রানির শিকার হচ্ছেন তারা। কথায় কথায় তাদের নানা দোষত্রুটি খুজতে থাকেন উর্ধতনরা। কোন প্রকার দোষের সন্ধান পেলেই তাদের চাকুরী হারাতে হয়। এনিয়ে কোন যাচাই বাছাই বা সঠিক তদন্ত করে দোষ প্রমানের কোন সিস্টেমও নেই। যে কেউ তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলেই চাকরীচ্যুতি।

বিুব্ধ মিটার রিডারদের কয়েকজন জানান,তাদের যদি ট্রেড ইউনিয়ন বা সমিতি করার অধিকার দেয়া হতো তাহলে হয়তো এসব বিষয়ে তারা সংশ্লিষ্ঠ কর্তৃপরে সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে সমস্যার সমাধান করতে পারতেন। এমন সুযোগ না থাকায় সবাই তিগ্রস্থ হচ্ছেন। এজন্যই তারা এখন নিরুপায় হয়ে চরম আন্দোলনের পথ বেছে নিয়েছেন।

বিষয়: বিবিধ

২২৯৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File